জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। কী নেই এই তালিকায়? চাল, ডাল থেকে আটা, ময়দা, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, মুরগি, চিনি, ডিম সবকিছুর দামই বাড়তি। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকাল তাদের প্রতিবেদনে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর এই পণ্যগুলোর বাড়তি দরের কথা জানিয়েছে। অবশ্য সরকারের সংস্হাটি বিভিন্ন পণ্যের যে বাড়তি দরের কথা জানিয়েছে, বাস্তবে দাম বেড়েছে আরো বেশি। নিত্যপণ্যের এই বাড়তি দরে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সামগ্রিকভাবে জীবযাত্রার ব্যয় বহুলাংশে বেড়ে যাবে। পরিবহনের পাশাপাশি পণ্যের উত্পাদন খরচ বাড়বে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এতে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী বড় ধরনের চাপের মুখে পড়বে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কাওরানবাজার, শান্তিনগর ও তুরাগ এলাকার নতুন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি চালে তিন থেকে চার টাকা বেড়ে সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেট ৬৫ থেকে ৮০ টাকা, মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা ও মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝে আটা, ময়দার দাম কিছুটা কমলেও এ দুটি পণ্যের দামও গত দুই দিনে কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বেড়েছে। গতকাল বাজারে খোলা সাদা আটা কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা, খোলা ময়দা কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা ও প্যাকেট ময়দা কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে ভোজ্য তেল সয়াবিন ও পাম অয়েলের দামও। পাঁচ লিচারের বোতলজাত সয়াবিন তেলে ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৮৮০ থেকে ৯১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিনে ৫ টাকা বেড়ে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খোলা পাম অয়েলে লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক দিনে দাম বেড়েছে এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে, পেঁয়াজ, মরিচ, আদা ও রসুনও। প্রতি কেজি পেঁয়াজে ৫ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুকনা মরিচের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। আমদানিকৃত শুকনা মরিচ কেজিতে ৮০ টাকা বেড়ে ৪৩০ থেকে ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায়। আদার দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে দেশি আদা ১২০ থেকে ১৪০ টাকা ও আমদানিকৃত আদা ৯০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। রাজধানীর বাজারগুলোতে মানভেদে প্রতি কেজি দেশি রসুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও আমদানিকৃত রসুন ১১০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম বেড়েছে চিনিরও। প্রতি কেজি চিনিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮২ থেকে ৮৫ টাকায়। তবে গত দুই দিনের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের। এক লাফে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে। আর পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগী কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্হা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দেবে। কারণ, তেলের দাম বাড়ায় পরিবহনের পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। সার্বিকভাবে মূলস্ফীতি ২ থেকে ৩ শতাংশ বাড়বে বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্িততে পড়বে। তাদের ওপর আঘাতটা আসবে সবচেয়ে বেশি।