সম্প্রতি ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হেফাজত-এ ইসলাম-এর একটি পোস্টার সকলের নজর কাড়ে। যে পোস্টারে লেখা রয়েছে “আল্লাহর আইন অমান্যকারী, নারীবাদী, ইসলামের শত্রু, আল্লাহর গজবপ্রাপ্ত, ইহুদি নাসারার এজেন্ট নিলুফার হক-এর বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে প্রকাশ্যে ফাঁসি দাও, দিতে হবে।”
এই ধরনের পোস্টার বাংলাদেশে সচারাচর দেখা যায়না এবং অনেকটা দূর্লভও বটে সুতরাং নিজস্ব কৌতূহলের এক গনগনে আগুনে ঝাঁপ দিতেই হোলো। স্থানীয় হেফাজতের কর্মীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তারা নিলুফার হক নামের প্রখ্যাত একজন নারীবাদী লেখিকা ও নারী অধিকার কর্মীর প্রকাশ্যে ফাঁসি দাবি করছেন। এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনা, আলোচনা। গতকাল সারাদেশের বিভিন্ন শহরের বিভিন্ন গলিতে চলেছে পোস্টারিং ও সমাবেশ। তাঁরা নিলুফার হককে বাংলাদেশের কুলাঙ্গার সন্তান হিসেবে সূচিত করেছেন।
নিলুফার হক একজন নারীবাদী লেখিকা ও নারী অধিকার কর্মী এবং বর্তমানে সুইডেনে বসবাস করছেন। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে ব্যক্তিগত ব্লগ সহ বিভিন্ন পাবলিক ব্লগ ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখালেখি করে আসছেন। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের প্রতি অন্যায় অবিচার-এর বিরুদ্ধে তিনি একজন বলিষ্ঠ কণ্ঠ। নারী অধিকার নিয়েও কাজ করছেন বেশ অনেক দিন ধরেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি তিনি হেফাজত-এ ইসলামের আমীর শাহ আহমেদ শফী হুজুরের মেয়েদের স্কুলে না পাঠানোর বক্তব্য নিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেন।
মামুন ইসলাম নামের এক হেফাজত-এ ইসলামের কর্মীর সাথে পোস্টার এর বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন, “নিলুফার হক হলো এ বাংলাদেশের একটি কুলাঙ্গার সন্তান। সে আমাদের হুজুরকে নিয়ে আজেবাজে কথা লিখে মূলত আমাদের ইসলাম ধর্মকে প্রশ্ন বিদ্ধ করেছে। ইসলাম অবমাননাকারীদের কোনভাবেই ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমার আবেদন অবিলম্বে এই কুলাঙ্গার মহিলার নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে। নাহলে আমরা শীঘ্রই কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।”
গফুর চৌধুরী নামের আরেকজন হেফাজতে ইসলামির কর্মীর বলেন, “বাংলার মাটিতে এ ধরনের নারীবাদীদের কোন স্থান হবে না। তসলিমা নামের আরেক জারজকে আমরা লাঠিপেটা করে দেশ ছাড়া করেছিলাম। আর এবার সরকার আমাদের দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলন-এ যাবো, দরকার পড়লে সরকারি সকল ভবনে আগুন দিবো, তাও এই কুলাঙ্গার নিলুফার -কে বাংলার মাটিতে বাঁচতে দিবো না।”
এটিও উল্লেখ্য যে গত বুধবার দুপুরে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা কমিটির সমন্বয়ক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্তের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান জানান, গত সাত এপ্রিল শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমির ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে রফিউর রাব্বি ইসলাম ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বক্তব্য দেন।
হেফাজত নেতার দাবি রাফিউর রাব্বি ওই অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘যদি বাংলার মানুষ জানত সংবিধান বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দিয়ে শুরু হবে, দেশ হবে সাম্প্রদায়িকতার দেশ, তবে ৩০ লাখ শহীদের মুক্তিযুদ্ধে কেউ অংশগ্রহণ করত না।’
অনেকেই মনে করেন হেফাজতের এইসব উত্থান কিংবা রাফিউর রাব্বির বিরুদ্ধে মামলার ব্যাপারে শামীম ওসমানের প্রচ্ছন্ন ইন্ধন রয়েছে।